“স্বপ্নবাজ” স্টার্লিং ডি মামুনের গল্প

“স্বপ্নবাজ” স্টার্লিং ডি মামুনের গল্প


“স্বপ্নবাজ” স্টার্লিং ডি মামুনের গল্প

তরুণ উদ্যোক্তা স্টার্লিং ডি মামুন; নিজে স্বপ্ন দেখেন এবং স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সারাদেশের চার হাজারের বেশি নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। “অর্থের বিনিময়ে কাজ, এরই নাম স্বপ্নবাজ” স্লোগানকে সামনে রেখে গড়ে তুলেছেন “টিম স্বপ্নবাজ” নামে একটি ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশন টিম যারা কাজ করছে সারাদেশব্যাপী। টিম স্বপ্নবাজের মাধ্যমে সবেমাত্র ঢাকায় আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষার্থীরা ভাল অংকের উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন, পাশাপাশি পরিবারকেও অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই স্বপ্নবাজ মানুষটি এবং তার স্বপ্নবাজ টিমের পথচলার গল্প শোনাচ্ছেন টকস্টোরির হেড অফ কমিউনিকেশন খালিদ সাইফুল্লাহ্।

স্বপ্নবাজ নামের কারন কি?
মামুনঃ আমি নিজে একজন স্বপ্নবাজ, স্বপ্ন দেখি এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাই। একটি টিম হয়ে অনেকে মিলে কাজ করব – এরকম পরিকল্পনা আমাদের ছিল। আমরা একটি বিশেষ নাম খুঁজেছিলাম যেটি সবার পছন্দ হবে এবং আমাদের মিশনকে তুলে ধরবে। তখনই “টিম স্বপ্নবাজ” নাম ঠিক করি আমরা। এখানে যারা থাকবে সবাই স্বপ্ন দেখবে, স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকবে না, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবে। এই কারনেই স্বপ্নবাজ নামটি রাখা।
আপনারা কোন সেক্টরে কাজ করছেন এবং কি কি সেবা দিচ্ছেন?
মামুনঃ আমরা মূলত বিভিন্ন কম্পানির অ্যাক্টিভেশন এবং ইভেন্ট নিয়ে কাজ করছি, ব্র্যান্ড প্রমোটার দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা প্রোডাক্ট বেইসড মার্কেটিং নিয়েও কাজ করছি।
যাত্রা শুরুর গল্প জানতে চাই
মামুনঃ আমি অনার্স প্রথম বর্ষে থাকাকালীন ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনের কাজ শুরু করি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হিসেবে নিজের পড়াশোনার খরচ যাতে নিজেই চালাতে পারি এই চিন্তা থেকে ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনে আসা। ২০১২ সাল থেকেই এই সেক্টরে কাজ করছি। এরপর বিভিন্ন কম্পানি থেকে একের পর এক কাজ পেতে থাকি নিয়মিত। একসাথে ৫/৬টা প্রজেক্ট যখন হাতে পাই, এই কাজগুলো ম্যানেজ করার জন্য প্রচুর লোক দরকার হয়। তখন আমি টিম তৈরি করে কাজ শুরু করি এবং টিম স্বপ্নবাজের যাত্রা শুরু হয়।
আপনাদের পথচলা এবং বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন
মামুনঃ আমরা এখন সারাদেশে ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশন এর কাজ করছি। সারাদেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০০ এর অধিক প্রমোটার আছেন টিম স্বপ্নবাজের। এর মধ্যে ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনে নিয়মিত কাজ করছেন ৬০০ জনের বেশি। ঢাকাতে নিয়মিত কাজ করছেন প্রায় ৩০০ এর অধিক ব্র্যান্ড প্রমোটার। আমরা দেশের শীর্ষ মোবাইল ব্যাংকিং কস্পানি, সিম কম্পানি, ড্রিংকস কম্পানি এবং এজেন্সির সাথে কাজ করছি নিয়মিত। টিম স্বপ্নবাজের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন কারা?
মামুনঃ ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনের কাজগুলো বেশিরভাগই করে স্টুডেন্ট- যারা ঢাকাতে নতুন এসেছে বা সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এই সকল ছেলেমেয়েরা পরিচিত বড় ভাই না থাকার কারনে টিউশনি খুঁজে পায়না, আমরা মূলত এদেরকে খুঁজে খুঁজে কাজ দেবার চেষ্টা করি। যেখানে মাসে ৫০০০ টাকা ইনকাম করতে তাদের কষ্ট হয় কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনে কাজ করলে তারা খুব সহজেই মাসে ১৫০০০ থেকে ২০০০০ টাকার বেশি ইনকাম করতে পারে। এতে করে তারা ফ্যামিলিকেও সাপোর্ট দিতে পারছে।
দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে এবং সোশ্যাল ইমপাওয়ারিং এ আপনারা ভূমিকা রাখছেন-
মামুনঃ বাংলাদেশে বেকার অনেক, চাকরি সোনার হরিণের মত। প্রাইভেট সেক্টরে জব পেতে গেলেও রেফারেন্স লাগে। ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনের কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায়, স্কিল ডেভেলপ হয়। পরবর্তীতে জব পাওয়া তাদের জন্য সহজ হয়। আমরা এই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই কাজ করছি। সমাজে এত বেকার, তাদের আমরা গ্রাজুয়েশন শেষ হবার আগেই জব দিতে পারছি, আমার মাধ্যমে তারা ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিচ্ছে; এটি আমার একটি ভাললাগার যায়গা। এছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতার যায়গা থেকে আমরা সামাজিক উন্নয়নমূলক স্বেচ্ছাসেবী কিছু কাজ করছি। যেমন- টিম স্বপ্নবাজের কেউ বেতন পাবার সাথে সাথেই তাকে ন্যুনতম তিনটা করে গাছ লাগাতে হবে বা তিনটা গাছ গিফট করতে হবে। প্রত্যেক মাসের বেতন পাওয়ার পর নিয়মিত তাকে গাছ লাগাতে হবে। এছাড়াও স্বপ্নবাজের সদস্যরা নিয়মিত রক্তদান করেন।
স্বপ্নবাজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মামুনঃ আমরা সারাদেশের একেবারে গ্রাম পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করতে চাই। যারা গ্রাম বা মফস্বলে বেকার আছেন আমরা তাদের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমি চাই সারাদেশে টিম স্বপ্নবাজের প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত হোক।
বাংলাদেশে এই সেক্টরের সুযোগ এবং সম্ভাবনা
মামুনঃ দেশে এই সেক্টরে কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে। ঢাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা অ্যাক্টিভেশন কম্পানি আছে যেখানে স্টুডেন্টদের জন্য কাজ করার বড় সুযোগ রয়েছে। তারা চাইলেই পার্ট টাইম বা কন্টাকবেজড কাজ করে ভাল অঙ্কের উপার্জনের পাশাপাশি নিজেদের টিমওয়ার্কিং এবং কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করতে পারে।
বাংলাদেশে এই সেক্টরের চ্যালেন্জগুলো –
মামুনঃ আমরা যেহেতু থার্ড পার্টি হিসেবে কাজ নেই, এতে করে অনেকসময় কম্পানিগুলো থেকে ঠিক সময়ে পেমেন্ট পাওয়া যায় না, এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ। আরেকটি চ্যালেন্জ হল মাঠে কাজ করার জন্য পরিশ্রমী ব্র্যান্ড প্রমোটার খুবই কম। কেউ হয়ত কিছুদিন শখের বশে কাজ করার পর ঠিকমত পরিশ্রম করতে পারে না বা চাকরি ছেড়ে দেয়। দেশে বেকার অনেক কিন্তু পরিশ্রমী মানসিকতার মানুষের বড়ই অভাব

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post